সুপ্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা সকলে মিলে ঈশ্বরের গুণগান করবে।
শৌলের মন পরিবর্তনের ঘটনাটি তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা/অভিভাবকের কাছ থেকে জেনেছ। শৌল যীশুর দর্শন পাওয়ার পূর্বে কেমন ছিল এবং পরে তার কী কী পরিবর্তন হয়েছিল তাও তোমরা দেখেছ। এসো শিষ্যচরিত/প্রেরিত ৯ : ১-৩১-এর আলোকে পবিত্র বাইবেলে এ সম্পর্কে কী লেখা আছে তা দেখি। তুমি চাইলে এ পদগুলো বাড়িতে আগে থেকেই পাঠ করতে পারো।
শৌল যীশু-কে বিশ্বাস করল
এদিকে শৌল প্রভুর শিষ্যদের মেরে ফেলবেন বলে ভয় দেখাচ্ছিলেন। দামেস্ক শহরের সমাজ-ঘরগুলোতে দেবার জন্য তিনি মহাপুরোহিতের কাছে গিয়ে চিঠি চাইলেন। যত লোক যীশুর পথে চলে, তারা পুরুষ হোক বা স্ত্রীলোক হোক, তাদের পেলে যেন তাদের বেঁধে যিরূশালেমে আনতে পারেন সেই ক্ষমতার জন্যই তিনি সেই চিঠি চেয়েছিলেন। পথে যেতে যেতে যখন তিনি দামেস্কের কাছে আসলেন তখন স্বর্গ থেকে হঠাৎ তাঁর চারদিকে আলো পড়ল। তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং শুনলেন কে যেন তাঁকে বলছেন, “শৌল, শৌল, কেন তুমি আমার উপর অত্যাচার করছ?”
শৌল জিজ্ঞাসা করলেন, “প্রভু, আপনি কে?”
তিনি বললেন, “আমি যীশু, যাঁর উপর তুমি অত্যাচার করছ। এখন তুমি উঠে শহরে যাও। কী করতে হবে তা তোমাকে বলা হবে।”
যে লোকেরা শৌলের সঙ্গে যাচ্ছিল তারা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারা কথা শুনেছিল কিন্তু কাউকে দেখতে পায়নি। পরে শৌল মাটি থেকে উঠলেন, কিন্তু চোখ খুললে পর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তাঁর সঙ্গীরা হাত ধরে তাঁকে দামেস্কে নিয়ে গেল। তিন দিন পর্যন্ত শৌল চোখে দেখতে পেলেন না এবং কিছুই খেলেন না।
দামেস্ক শহরে অননিয় নামে একজন শিষ্য ছিলেন। প্রভু তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন, “অননিয়।”
উত্তরে তিনি বললেন, “প্রভু, এই যে আমি।”
প্রভু তাঁকে বললেন, “সোজা নামে যে রাস্তাটা আছে তুমি সেই রাস্তায় যাও। সেখানে যিহূদার বাড়ীতে শৌল বলে তার্য শহরের একজন লোকের খোঁজ কর। সে প্রার্থনা করছে এবং দর্শনে দেখেছে যে, অননিয় নামে একজন লোক এসে তার গায়ে হাত রেখেছে যেন সে আবার দেখতে পায়।”
অননিয় বললেন, “প্রভু, আমি অনেকের মুখে এই লোকের বিষয় শুনেছি যে, যিরূশালেমে তোমার লোকদের উপর সে কত অত্যাচার করেছে। এছাড়া যারা তোমার নামে প্রার্থনা করে তাদের ধরবার জন্য প্রধান পুরোহিতদের কাছ থেকে অধিকার নিয়ে সে এখানে এসেছে।”
কিন্তু প্রভু অননিয়কে বললেন, “তুমি যাও, কারণ অযিহূদীদের ও তাদের রাজাদের এবং ইস্রায়েলীয়দের কাছে আমার সম্বন্ধে প্রচার করবার জন্য আমি এই লোককেই বেছে নিয়েছি। আমার জন্য কত কষ্ট যে তাকে পেতে হবে তা আমি তাকে দেখাব।”
তখন অননিয় গিয়ে সেই বাড়ির মধ্যে ঢুকলেন আর শৌলের গায়ে হাত দিয়ে বললেন, “ভাই শৌল, এখানে আসবার পথে যিনি তোমাকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি প্রভু যীশু। তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন যেন তুমি তোমার দেখবার শক্তি ফিরে পাও এবং পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হও।” তখনই শৌলের চোখ থেকে আঁশের মতো কিছু একটা পড়ে গেল এবং তিনি আবার দেখতে পেলেন। এর পরে তিনি উঠে জলে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করে শক্তি ফিরে পেলেন। শিষ্যচরিত/প্রেরিত ৯ : ১-১৯
তোমাকে একটু সহজ করে বলছি
শৌল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ভয় প্রদর্শন করতেন। যেখানে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা থাকতেন সেখান থেকেই বেঁধে এনে যিরূশালেমে রাখতেন ও নির্যাতন করতেন। একদিন শৌল যখন দামেস্কের কাছে আসলেন তখন উপর থেকে আলোর মাধ্যমে যীশু তাকে দর্শন দিলেন এবং বললেন শৌল তুমি কেন আমাকে তাড়না করছো? শৌল অন্ধ হয়ে গেলেন ও ভূমিতে পড়ে গেলেন। এরপর অননিয় নামে একজন লোকের সাথে যীশু শৌলের পরিচয় করিয়ে দিলেন। অননিয় যখন শৌলের সাথে কথে বলছিলেন তখন শৌলের চোখ খুলে গেল এবং তিনি দেখতে পেলেন। পরে তিনি যীশুকে বিশ্বাস করে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন।
মন পরিবর্তনের পরে শৌল
শৌল দামেস্কের শিষ্যদের সঙ্গে কয়েক দিন রইলেন। তার পরে সময় নষ্ট না করে তিনি ভিন্ন ভিন্ন সমাজ-ঘরে এই কথা প্রচার করতে লাগলেন যে, যীশুই ঈশ্বরের পুত্র। যারা তাঁর কথা শুনত তারা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করত, “যিরূশালেমে যারা যীশুর নামে প্রার্থনা করে তাদের যে অত্যাচার করত এ কি সেই লোক নয়? এখানেও যারা তা করে তাঁদের বেঁধে প্রধান পুরোহিতদের কাছে নিয়ে যাবার জন্যই কি সে এখানে আসেনি?” শৌল কিন্তু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে লাগলেন এবং যীশুই যে মশীহ তা প্রমাণ করলেন। এতে দামেস্কের যিহূদীরা বুদ্ধিহারা হয়ে গেল।
এর অনেক দিন পরে যিহূদীরা তাঁকে মেরে ফেলবার ষড়যন্ত্র করতে লাগল, কিন্তু শৌল তাদের ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারলেন। তাঁকে মেরে ফেলবার জন্য যিহূদীরা শহরের ফটকগুলো দিনরাত পাহারা দিতে লাগল। কিন্তু একদিন রাতের বেলা শৌলের শিষ্যেরা একটা ঝুড়িতে করে দেয়ালের একটা জানলার মধ্য দিয়ে তাঁকে নিচে নামিয়ে দিল।
শৌল যিরূশালেমে এসে শিষ্যদের সঙ্গে যোগ দিতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু তারা সবাই তাঁকে ভয় করতে লাগল। তারা বিশ্বাস করতে পারল না যে, শৌল সত্যিই একজন শিষ্য হয়েছেন। কিন্তু বার্ণবা তাঁকে সঙ্গে করে প্রেরিতদের কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁদের জানালেন, দামেস্কের পথে শৌল কিভাবে প্রভু যীশুকে দেখতে পেয়েছিলেন এবং প্রভু তাঁর সঙ্গে কীভাবে কথা বলেছিলেন, আর দামেস্কে যীশুর সম্বন্ধে তিনি কীভাবে সাহসের সঙ্গে প্রচার করেছিলেন। এর পরে শৌল যিরূশালেমে শিষ্যদের সঙ্গে রইলেন এবং তাঁদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন ও প্রভুর বিষয়ে সাহসের সঙ্গে প্রচার করে বেড়াতেন। যে যিহূদীরা গ্রিক ভাষা বলত তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন ও তর্ক করতেন, কিন্তু এই যিহূদীরা তাঁকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগল। বিশ্বাসী ভাইয়েরা এই কথা শুনে তাঁকে কৈসরিয়া শহরে নিয়ে গেলেন এবং পরে তাঁকে তাষ শহরে পাঠিয়ে দিলেন।
সেই সময় যিহূদিয়া, গালীল ও শমরিয়া প্রদেশের মণ্ডলীগুলোতে শান্তি ছিল, আর সেই মণ্ডলীগুলো গড়ে উঠছিল। ফলে প্রভুর প্রতি ভক্তিতে ও পবিত্র আত্মার উৎসাহে তাদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছিল। শিষ্যচরিত/প্রেরিত ৯ : ২০-৩১
তোমাকে একটু সহজ করে বলছি
শৌল যীশুকে জানার পর বিভিন্ন স্থানে যীশুর কথা প্রচার করতে থাকলেন। তাতে তাঁর উপর নির্যাতন বেড়ে গেল। শিষ্যরা শৌলকে উদ্ধার করে অন্য শহরে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু শিষ্যদের মধ্য থেকে কয়েকজন শৌল যে যীশুকে বিশ্বাস করেন সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন। তাতে বার্ণবা শিষ্যদের বললেন যে, শৌল সত্যিকারেই যীশুকে বিশ্বাস করেন। এতে অন্যান্য শিষ্যরা শৌলকে বিশ্বাস করলেন। তারা সকলে একত্রে যীশুর কথা প্রচার করতে থাকলেন।
আরও দেখুন...